নিজস্ব প্রতিবেদক:
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অভিযোগ উঠেছে— তদন্তের নামে প্রহসন চলছে, আর সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোর মধ্যে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইসি জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নামে দুটি দল প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেছে। কিন্তু ঘোষণার পরই জাতীয় লীগকে ঘিরে তৈরি হয় নানা প্রশ্ন।
মিরপুরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা অনুসন্ধান করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা পান একটি পরিত্যক্ত গুদামঘর। সেখানে ছিল না কোনো নামফলক, সাইনবোর্ড বা কার্যক্রমের চিহ্ন। এমনকি দলের গঠনতন্ত্র নিয়েও সদুত্তর দিতে পারেননি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আজকে আমি খুব ব্যস্ত, ইন্টারভিউটা আজ দিতে পারবো না।”
বিতর্কের পর কমিশন নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এবার শুধু সাতটি পুনঃতদন্তাধীন দলই নয়, পর্যালোচনায় থাকা আরও তিনটি দলকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়।
তবে নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোর অভিযোগ, ইসি নির্ধারিত বিধিমালা অনুসরণ না করে অতিরিক্ত কাগজপত্র ও দলিল চাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই পুনঃতদন্ত প্রক্রিয়া আসলে আগের প্রতিবেদনকে বাতিল করার অজুহাত মাত্র।
মৌলিক বাংলা দলের সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহমেদ সজীব বলেন, “আগের রিপোর্ট তারা বাতিল করবে। এখন যে রিপোর্ট তৈরি হবে, সেটি তাদের সাজানো হবে।”
আমজনতা দলের সচিব তারেক রহমান অভিযোগ করেন, “দলের জন্য অফিস ভাড়া নিয়েছি, ভাড়ার ডিডও জমা দিয়েছি। এখন তারা ভবনের মালিকানা দলিল চাচ্ছে— যা নিয়মের বাইরে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন বলেন, “আমরা ১০৩টি উপজেলা কমিটির তালিকা জমা দিয়েছি। এখন তারা মাঠপর্যায়ের সব কমিটি চাইছে— এটা বাস্তবসম্মত নয়। কমিশন যেন অযথা চাপ নিয়ে কাজ না করে, এতে সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, দল নিবন্ধনের মতো একটি প্রাথমিক প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়েই যদি প্রশ্ন ওঠে, তবে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনেও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান মন্তব্য করেন, “নিবন্ধন কমিটির তদন্তে বা পর্যালোচনাকারীদের সিদ্ধান্তে ত্রুটি থাকলে সেটা কমিশনের সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করবে। ছোট বিষয়ে যদি তারা বিভ্রান্ত হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ থাকবেই।”
তবে কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “কিছু তথ্যের অসম্পূর্ণতা পাওয়া গেছে। তাই প্রাসঙ্গিকভাবে আরও পর্যালোচনা করা সময়ের দাবি। তাড়াহুড়ো করে ভুল সিদ্ধান্তের চেয়ে একটু দেরিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াই উত্তম।”
তিনি আশ্বস্ত করেন, “কাউকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হবে না।”