নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে অনৈক্য। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাইয়ে জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করায় তা স্পষ্ট হয়। একইভাবে একসময় মিত্র থাকা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নির্বাচনী ইস্যুতে, বিশেষ করে পিআর পদ্ধতি নিয়ে, বিভেদ প্রকট হচ্ছে। সবমিলিয়ে দেশের রাজনীতি এখন চরম অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
আগামী ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শনিবার (২৫ অক্টোবর) দৈনিক যুগান্তর আয়োজন করে ‘রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা: নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা এতে অংশগ্রহণ করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতিতে ‘ন্যূনতম সমঝোতার’ মাধ্যমে স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচন পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক অঙ্গন স্থিতিশীল হলে তা নির্বাচনে সহায়ক হবে, এবং স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে পারে।”
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, “সরকার ও রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা থাকলে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা সম্ভব। প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন যুদ্ধের রূপ না নেয়, তা মনে রাখতে হবে।”
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিণতি ভয়াবহ। অতীত আমাদের শিক্ষা দিয়েছে।” নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুররহমান মান্না বলেন, রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার জন্য ন্যূনতম সমঝোতা প্রয়োজন, যেখানে বড় দল হিসেবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু যুক্তি দেন, “রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতার মূল কারণ হলো ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।”
গোলটেবিল আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার চিত্র ফুটে ওঠে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বক্তব্যের সময় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ প্রতিবাদ জানান, যা অল্প সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
দিনশেষে আলোচকরা একমত হন যে, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে অনৈক্যের ফলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য মারাত্মক হুমকি। নির্বাচনের আগে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা জরুরি।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার এবং সঞ্চালনা করেন প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম। আলোচকরা ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপির ড. মাহদী আমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতের আজিজুল হক ইসলামাবাদী, অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী, জামায়াতের কামাল হোসেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কবির আহমেদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এইচ আর এম রোকন উদ্দিন, ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এ কে এম শামসুদ্দিন।
অতএব রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এখন দেশের সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।