নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একটি ‘বিশেষ আদেশ’ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট আয়োজন এবং আগামী জাতীয় সংসদকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে ওই বিশেষ আদেশের আইনি ভিত্তি কী হবে— তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি কমিশন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সংসদ ভবন এলাকায় কমিশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন ও মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক এবং ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নসংক্রান্ত খসড়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব দেন— জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতেই বিশেষ আদেশ জারি করা যেতে পারে।
আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিশনের কাছে ‘বিশেষ আদেশের পূর্ণাঙ্গ খসড়া’ জমা দেবে।
‘বিশেষ আদেশ’-এর ভিত্তি নিয়ে মতবিনিময়
বিশেষজ্ঞদের মতে, আদেশের ভূমিকায় উল্লেখ থাকবে— অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা পেল। সেখানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলেই এই ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে’— এমন ব্যাখ্যা দেওয়া হতে পারে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “গণঅভ্যুত্থনের মাধ্যমেই সরকার জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধি হয়েছে, তাই ওই ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশেষ আদেশ জারি করা সম্ভব।” তবে আদেশটি রাষ্ট্রপতি না প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, তা নিয়েও বৈঠকে বিতর্ক হয়। সাধারণ অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতি জারি করলেও, এই আদেশ যেহেতু বিশেষ ক্ষমতাবলে জারি হবে— তাই এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গণভোটের কাঠামো ও প্রশ্ন
আলোচনায় উঠে আসে— গণভোটে একটি বা দুটি প্রশ্ন থাকবে কি না। প্রাথমিকভাবে দুটি প্রশ্নের কথা ভাবা হলেও, এখন একটি প্রশ্নের প্রস্তাব গুরুত্ব পাচ্ছে। সেটি হতে পারে—
“জনগণ কি জুলাই সনদ এবং তার ভিত্তিতে জারিকৃত বিশেষ আদেশকে সমর্থন করে?”
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, গণভোটের তারিখ নির্ধারণ সরকারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হোক, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে বিভাজন রয়েছে। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল ভোটের দিনই গণভোটের পক্ষে, অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ভোটের আগেই গণভোটের দাবি জানাচ্ছে।
সংসদের ভূমিকা: দ্বৈত দায়িত্ব
বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবে, আগামী জাতীয় সংসদকে সংবিধান সংস্কার পরিষদেরও দায়িত্ব দেওয়া হবে, যাতে জুলাই সনদের প্রস্তাবসমূহ টেকসইভাবে সংবিধানে প্রতিফলিত হয়। পরিষদের মেয়াদ ছয় থেকে নয় মাস নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের অবস্থান
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুসংহত প্রস্তাব দিতে চাই। যাতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, গণভোট ও ভবিষ্যৎ সংস্কারের রূপরেখা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে। এজন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে।”
রাজনৈতিক পটভূমি
গত শুক্রবার বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ ২৪টি দল ও জোট ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ স্বাক্ষর করেছে। রোববার যোগ দিয়েছে গণফোরাম। তবে আইনি নিশ্চয়তার অভাবে এখনো জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের চার দল এতে যোগ দেয়নি।
চলতি সপ্তাহেই বিশেষজ্ঞদের খসড়া পাওয়ার পর ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারকে দেবে বলে জানা গেছে।