মো. জোনাব আলী
রংপুরের তিন উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে দুই শতাধিক গরু। একই সময়ে অন্তত অর্ধশত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অসচেতনভাবে অসুস্থ গরু জবাই ও মাংস খাওয়ার কারণেই পশুবাহিত এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
মানুষের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যু
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। তবে বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ জন ছাড়িয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে— স্থানীয় কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ও গৃহবধূ কমলা বেগম। তারা অসুস্থ গরুর মাংস জবাই ও রান্নার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
কিভাবে ছড়াচ্ছে রোগ
পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় গরু-ছাগলের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাবে, এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ইতিমধ্যেই অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত। সংক্রমিত পশুর রক্ত, মাংস বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সংস্পর্শে আসায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
আরও পড়ুন:
মিঠাপুকুরের সেরুডাঙ্গায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে আহত ২
মিঠাপুকুরে নিখোঁজের একদিন পর যুবকের লাশ উদ্ধার
আরিপপুরে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে দোয়া মাহফিল ও খাবার বিতরণ
টিকার সংকট
প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, পীরগাছায় অন্তত দেড় লাখ পশু আক্রান্ত হলেও টিকার চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ খুব কম। ৫৩ হাজার টিকা বরাদ্দ পেলেও আরও ৫০ হাজার টিকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। মিঠাপুকুর ও কাউনিয়ায়ও একই সংকট— ৮০ হাজার টিকার বিপরীতে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২০ হাজার। ফলে অনেক পশুই টিকা পাচ্ছে না।
প্রশাসনের অবস্থান
পীরগাছার ইউএনও শেখ মো. রাসেল জানিয়েছেন, “আমরা অতিরিক্ত ৫০ হাজার টিকার আবেদন করেছি। আপাতত অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে আছে, আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
রংপুর সিভিল সার্জন ডা. শাহিন সুলতানা জানান, প্রতিটি উপজেলায় মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক মজুত আছে। তবে গরু মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, অসুস্থ গরু জবাই করা যাবে না, আর আক্রান্ত মাংস খাওয়াও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার বলেও তারা মনে করছেন।
উপসংহার
রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দুই শতাধিক গরু মারা যাওয়া এবং বহু মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা গ্রামীণ অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা ও টিকা কার্যক্রমই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র কার্যকর উপায়।