October 27, 2025, 10:25 pm
Headline :

অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক পীরগাছায় শনাক্ত ৮, উপসর্গ মিলেছে আরও ২ উপজেলায়

অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক পীরগাছায় শনাক্ত ৮, উপসর্গ মিলেছে আরও ২ উপজেলায়

রংপুর প্রতিনিধি,

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত আটজন রোগী শনাক্তের পর এবার মিঠাপুকুর ও কাউনিয়াতেও এ রোগের উপসর্গ পাওয়া গেছে। সরকারি স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, রোগটি কেবল মানুষের শরীরেই নয়, গবাদিপশুর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুই মাসে প্রাণ গেল দুজনের

জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। ওই সময় উপজেলার চার ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মানুষ আক্রান্ত হন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরীক্ষায় অসুস্থ গরুর মাংস থেকে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। পরে ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ দল নমুনা সংগ্রহ করে আটজনের দেহে অ্যানথ্রাক্স নিশ্চিত করেন।

আইইডিসিআর জানায়, ফ্রিজে রাখা গরুর মাংস এবং এক ছাগলের মাংসেও অ্যানথ্রাক্স জীবাণু মিলেছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, “পীরগাছার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি, এর মধ্যে আটজন পজিটিভ।”

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বলছে, শুধু বহির্বিভাগেই ৩০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আরও ২০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বাইরে থেকে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। যদিও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসনাত দাবি করেছেন, মৃত্যুর ঘটনাগুলো সরাসরি অ্যানথ্রাক্সে হয়নি।

অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই মাসে শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে। এতে গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।

কসাইখানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভাব

রংপুর বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার পশু জবাই হয়। কিন্তু কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা, নেই ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্য সনদ ও লাইসেন্স নেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ীরই তা নেই।

একই চিত্র পাশের গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও রংপুরের তারাগঞ্জেও। সুন্দরগঞ্জে দৈনিক ৬০–৬৫টি পশু জবাই হয়। পৌর বাজারে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বাকি বাজারগুলোতে নেই। তারাগঞ্জে ৬০ জনের বেশি মাংস ব্যবসায়ী আছেন, কিন্তু কারও লাইসেন্স নেই।

প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগ

রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন বলেন, “পীরগাছার বাইরে কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরেও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ মিলেছে। আরও আটজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।” তিনি অসুস্থ গবাদিপশু জবাই না করার পরামর্শ দেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানান, গত ২৬ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই; টিকাদান ও সচেতনতা কার্যক্রম চলছে।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ পরিচালক ডা. আব্দুর হাই সরকার বলেন, “নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা আমরা করতে চাই। কিন্তু জনবল সংকট বড় সমস্যা। প্রতিটি হাটে চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয় না।”

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে ছড়ায়

চিকিৎসকদের মতে, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর রক্ত, লালা, মাংস, হাড় ও নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলেই মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মূল লক্ষণ হলো চামড়ায় ঘা হওয়া। এজন্য বিশেষজ্ঞরা গবাদিপশুর টিকাদান কার্যক্রম আরও জোরদার করার সুপারিশ করেছেন।

উপসংহার

পীরগাছা থেকে শুরু হওয়া অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ ইতিমধ্যেই আশপাশের উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আইন ও নিয়ম কানুন থাকলেও পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হওয়ায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকাদান ও সচেতনতা কার্যক্রম না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page